মিশেল করিমের মালিকানাধীন বিজি ইন্টার্যাক্টিভ লিমিটেড নামের একটি কোম্পানির মাধ্যমে শত কোটি টাকা বিদেশে পাচারের অভিযোগ উঠেছে। বাংলাদেশে ব্যাংকিং সেবায় বিদেশি সফটওয়্যার বিক্রয়, রক্ষণাবেক্ষণ এবং কারিগরি সেবা প্রদানের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ এই টাকা বিদেশে প্রেরণের ক্ষেত্রে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সম্প্রতি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চেয়ারম্যান বরাবর প্রেরিত এক চিঠিতে এমন অভিযোগের কথা উঠে এসেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এনবিআর চিঠির সূত্র ধরে শিগগির তদন্তে নামছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ছাড়াও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান, অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) অতিরিক্ত আইজি এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের মহাব্যবস্থাপককেও চিঠির কপি দেয়া হয়েছে।
চিঠিতে জানানো হয়েছে, সিঙ্গাপুরের এফডিএস গ্লোবাল প্রাইভেট লিমিটেড, ইন্দোনেশিয়ার ফোর্টরেস ডাটা সার্ভিস, বাংলাদেশের এফডিএস বাংলাদেশ লিমিটেড এবং এফডিএস সার্ভিসেস লিমিটেড নামের চারটি কোম্পানি বাংলাদেশে বিদেশি ব্যাংকিং সফটওয়্যার বিক্রয়, রক্ষণাবেক্ষণ এবং কারিগরি সেবা প্রদান করছে।
বাংলাদেশে উল্লেখিত কোম্পানিগুলো পরিচালনা করছেন রাজু দুরয়ানি, কাজী মশিউর রহমান, চৌধুরী ফখরুদ্দীন মাহমুদ সিদ্দিকী এবং রায়হান উদ্দিন সরকার। আর বাংলাদেশে এসব প্রতিষ্ঠান থেকে বিদেশি সফটওয়ারের সেবা নিচ্ছে প্রাইম ব্যাংক লিমিটেড, এক্সিম ব্যাংক লিমিটেড, মার্কেন্টাইল ব্যাংক লিমিটেড।
এসব প্রতিষ্ঠান বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শাখা অফিসের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। সে বিবেচনায় কোম্পানিগুলো বিভিন্ন দেশের পরিচালনা পদ্ধতি সঠিকভাবে পালন করছে কিনা এবং অন্যকোন দেশে কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে কিনা তা তদন্ত করার অনুরোধ করা হয়েছে।
চিঠিতে জানানো হয়েছে, রাজু দুরয়ানি একজন বিদেশি নাগরিক এবং তিনি এফডিএস বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। রাজু দুরয়ানি বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ থেকে বাংলাদেশে ব্যবসা বা চাকরি করার অনুমতিপ্রাপ্ত কিনা এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নিয়ম অনুযায়ী যাবতীয় কর প্রদান করেছেন কিনা সেটাও তদন্ত করতে বলা হয়েছে।
একইসঙ্গে বিদেশি ব্যাংকিং সফটওয়্যার বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী পরিচালিত হচ্ছে কিনা, জাতীয় এবং ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা ব্যবস্থাপনা আইএসও ২৭০০১ সনদ অনুযায়ী পালিত হচ্ছে কিনা, গুণগত পরিচালনা পদ্ধতি আইএসও ৯০০১ সনদ অনুযায়ী পরিচালিত হচ্ছে কিনা, ব্যাংকিং সফটওয়্যার বিক্রয়, বাস্তবায়ন, কারিগরি সেবা প্রদান, রক্ষণাবেক্ষণ ইত্যাদি ব্যবস্থাপনা প্রদানে সিএমএমআই-৩ বা সিএমএমআই-৫ সনদ প্রাপ্ত কিনা তাও তদন্তের মাধ্যমে নির্ণয় করার অনুরোধ জানানো হয়েছে।
ব্যাংকিং সফটওয়্যার বিক্রয়, কারিগরি সেবা প্রদান, বাৎসরিক রক্ষণাবেক্ষণ ইত্যাদি প্রদানের বিপরীতে উল্লেখিত ব্যাংকগুলো থেকে গৃহীত দেশীয় অর্থ এবং বিদেশে প্রেরণকৃত অর্থের মধ্যে কোন অনিয়ম অথবা অমিল রয়েছে কিনা তা যাচাই করার কথা বলা হয়েছে। এছাড়াও গৃহীত অর্থ এবং সে অনুযায়ী বাংলাদেশ সরকারকে প্রদানকৃত কর সঠিকভাবে প্রদান করা হয়েছে কিনা অথবা আদৌ প্রদান করা হয়েছে কিনা তাও একটি সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে নির্ণয় করার জন্য বলা হয়েছে।
এদিকে আমাদের হাতে আসা একটি ব্যাংকের চেকের ছবিতে দেখা যাচ্ছে বিজি ইন্টার্যাক্টিভ লিমিটেড নামের একটি কোম্পানি শত কোটি টাকা পাচার করতে সহযোগিতা করছে। মূলত উপরে উল্লেখিত চারটি কোম্পানির টাকা বিদেশে পাচার করতে মিশেল করিমের কোম্পানিটি কাজ করে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর বনানীতে মিশেল করিমের একটি লাইসেন্সবিহীন অবৈধ রেস্টুরেন্ট রয়েছে। যেখানে অবৈধ মাদক ও নেশার দ্রব্যাদি বিক্রির বিষয়টি জানতে পেরেছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। শিগগির তার বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।